বাংলাদেশে সমবায়ের নতুন সম্ভাবনা: ড. তোফায়েল আহমেদ

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী অর্থনীতি তথা সমবায়ীদের মালিকানার দ্বিতীয় খাত সমবায়। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৌশলে সমবায়ের কোনো স্থান নেই। ব্যক্তি খাতের নানা জায়গায় রয়েছে বিভিন্ন রকমের প্রণোদনা। রাষ্ট্র খাতে রয়েছে নানা ভর্তুকি। সমবায় বাংলাদেশে এখন অর্থনীতির একটি ভূলে যাওয়া অধ্যায়। তাই এ সময়ে সমবায় নিয়ে লেখালেখি কিছুটা আহাম্মকি বৈকি! আমাকে মাঝে মাঝে আমারই কয়েকজন বন্ধু ঠাট্রাচ্ছলে ‘ তোফায়েল আহাম্মক’ বলে থাকেন। তবে আমার মনে হচ্ছে, এ কাজটি মোটেও আহাম্মকি নয়। আশা করি, সমবায়ীরা এ লেখাগুলোকে সিরিয়াসলি নেবেন।

একাডেমিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমবায় নিয়ে কোনো অধ্যয়ন নেই। এখানে কেউ টাকা দেয়না। টাকা না হলে সব ফাঁকা, অধ্যয়ন গবেষনা কিছই হয় না। অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসা প্রশাসন কারও মাথায় নেই যে, বিশ্বব্যাপী সমবায় নামের একটি অর্থনৈতিক আন্দোলন রয়েছে। রয়েছে শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, সুপার স্টোর, কৃষি, ডেইরি, মাছ, মাংস, ভোগ্যপণ্য সরবরাহ প্রভৃতিতে সমবায় প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্র অংশগ্রহণ। জাপান গর্ব করে বলে, তাদের অর্থনীতি হচ্ছে ‘সমবায় পুঁজিবাদী’ অর্থনীতি। বাংলাদেশে নতুন সমবায়ী পুঁজিবাদ বিকাশের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বিরাজ করছে। সে পরিপ্রেক্ষিত ও সম্ভাবনাটি মনে করিয়ে দিতেই এ লেখাগুলোর প্রকাশ ও পুনঃপ্রকাশ। এ বইয়ের সব রচনা নতুন নয়। নতুন-পুরানো মিলিয়ে এটি এ সময়ের একটি সংকলন। বইটির সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এটি আসলে পরিকল্পিত কোনো বই নয়। বিভিন্ন সময়ের কিছু পুরানো প্রবন্ধের সংকলন। তাই কোথাও রিপিটেশন এবং কোথাও দেওয়া তথ্যগুলো অনেক আগের, হালনাগাদ করা হয়নি। অবশ্য অনেক ক্ষেত্রে হালনাগাদ তথ্য পাওয়াও যায়নি। হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহের জন্য যে অর্থায়ন দরকার, সেজন্য কোথাও হাত পাততে মন সায় দেয়নি। অনেক সময় তা পন্ডশ্রম ও তাতে সম্মানহানি হয়। তাই এ ক্ষেত্রে পাঠকের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্ঠি আশা করি।

বিশিষ্ঠ সমবায় বিষয়ক লেখক, নেতৃস্থানীয় সমবায়ী নেতা ও সুদক্ষ সমবায় ব্যবস্থাপক, সম্প্রীতি সমবায়ের এমদাদ হোসেন মালেক দুই বছর আগে থেকে আমার সমবায় বিষয়ক আগের কিছু লেখা এক সাথে করে একটি বই প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব এবং বিআরডিবি ও সমবায় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও রেজিস্ট্রার মোঃ হুমায়ুন খালিদ পান্ডুলিপির কিছু কিছু লেখা পড়ে মতামত দিয়েছেন এবং বইটির একটি মুখবন্ধ লিখে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। ধ্রুব এষ একটি মনোরম প্রচ্ছদ করে দিয়ে বইটির শোভাবর্ধন করেছেন। তাদের সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।

সম্প্রীতির প্রকাশনা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান ও সাগর আহমেদ পান্ডুলিপি প্রস্তুতে প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। তাদের দুজনের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। বইটির মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। প্রকাশক বা অন্য কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের এখানে কোনো দায় নেই।

আমি আশা করি, বইটির বক্তব্য ও মন্তব্যগুলোকে দেশের চিন্তাশীল সমবায়ী, সমবায় বা অর্থনীতির শিক্ষক-গবেষক, নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিবাচকভাবে নেবেন এবং এদেশে সমবায়ের নতুন সম্ভাবনাগুলো খুঁজে দেখার চেষ্ঠা করবেন।   

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *